সংখ্যায় তিন হলেও ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা আসলে দুটি। ‘নোলক’ এবং ‘পাসওয়ার্ড’। ‘আবার বসন্ত’ ছবির একটি সংবাদ সম্মেলন ছাড়া আর কোন প্রচারণা চোখে পড়েনি। তাই এই ছবি নিয়ে আলোচনা না করাই উত্তম। নোলক ও পাসওয়ার্ডের নায়ক শাকিব খান। তবে প্রযোজনা সংস্থা ভিন্ন। পাসওয়ার্ড শাকিব খানের নিজের প্রযোজনা সংস্থা এসকে ফিল্মসের ছবি আর নোলক ছবির প্রযোজনার সাথে যুক্ত এর নায়িকা ববি।
ছবি মুক্তির আগে শাকিব বিভিন্ন জায়গায় ‘পাসওয়ার্ড’ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। ওই কথায় প্রাধান্য পেয়েছে বড় বাজেটের প্রসঙ্গটি। ৫কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত পাসওয়ার্ডের সাথে অন্য কোন ছবি ব্যবসা করতে পারবে না উল্লেখ করে শাকিব তার অভিনীত নোলক ছবিটি ঈদে মুক্তি না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যুক্তি ছিলো, প্রতিটি ছবি আমার সন্তানের মতো। কিন্তু বাজেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কম বাজেটের ছবি বড় বাজেটের ছবির সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকতে পারবে না।
গত সোমবার রাজধানীর মতিঝিল আর টিকাটুলি এলাকার মধুমতি ও অভিসার প্রেক্ষাগৃহে এই দুই ছবির দর্শকের সংখ্যা খুব বেশি পার্থক্য মনে হয়নি। ঈদের ছবি অথচ কোন ছবিই হাউজফুল দর্শক পায়নি। বরং অধিকাংশ সিটই ছিল ফাকা। এরজন্য হল মালিকদের দায়ী করা যাবে না। হলের পরিবেশ ভালোই ছিল। কিন্তু পর্দার ছবিতে দর্শক ধরে রাখার মতো তেমন আকর্ষণ ছিল না। শাকিব যে বড় বাজেটের কথা বলেছিলেন, ছবি দেখে সেই খরচ নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়নি। তবে অধিকাংশ খরচই ছিলো অপ্রয়োজনীয়।
পাসওয়ার্ড ছবির শুরুতে তুরস্কে দৃশ্যায়িত একটি গান দেখানো হয়েছে যার সাথে গল্পের কোন যোগসূত্র নেই। ছবির মাঝখানে শত্রু পক্ষের তাড়া খেয়ে নায়িকা বুবলিকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মেরিন একাডেমীতে আশ্রয় নেয় শাকিব। ওখানকার লঞ্চের ছাদে বসে দুজনে তরমুজ খাওয়ার মূহুর্তে হঠাৎ গান। যার দৃশ্যায়ন হয়েছে তুরস্কে। শাকিব খানের ভাষায়, এই দুই গানেই ব্যায় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় গানটি আকর্ষনীয় হলেও গল্পের সাথে খুব বেশি সামাঞ্জস্য নয়। এছাড়া গল্পের শুরুতে দর্শকদের জোড় করে হাসানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা শাকিব খানের ছবি থেকে দর্শক আশা করে না। একবাবা তার মেয়েকে পর্দার মধ্যে রাখেন অথচ উপড়ের তলা ভাড়া দিয়ে রাখেন দুই ব্যাচেলর ছেলের কাছে। আর ওই ছেলেদের সাথে বাবার সামনে দিয়ে মেয়ে বের হয়ে যায় বাবা চিনতে পারেন না। এই গল্প দিয়ে পরিচালক আসলে কি বার্তা দিতে চেয়েছেন দর্শকদের বোধগম্য হয়নি। তবে সবচেয়ে হাস্যকর যে ক্রুটি তা হলো, বাসায় মেয়েকে না পেয়ে পুলিশের সাহায্য চান বাবা।
পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে কোন দিন আমার মেয়ে রেডিও, টিভি, টেলিফোন, ইন্টারনেট চোখে দেখেন’। অথচ এই মেয়ে বাসার ছাদে শাকিব খানের সাথে কম্পিউটারে গেম খেলার সময় ইমন একটি পেনড্রাইভ নিয়ে আসেন। এর ভেতরে কী আছে তা নিয়ে শাকিব-ইমন দ্বন্দ্বে থাকলেও খুব সতঃস্ফুর্তভাবে প্রেনড্রাইভ কম্পিউপারে যুক্ত করে মেয়েটি আবিস্কার করে এতে আছে সুইসব্যাংকের তথ্য। পৃথিবীর সব প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা একজন মেয়ের পক্ষে কিভাবে এটা করা সম্ভব সেটা মোটা দাগের একটি প্রশ্ন। ছবির শেষ দিকে শাহিনপুর পরিত্যাক্ত পার্ক থেকে ইমনকে সরে যেতে একটা ফোন দেয়া প্রয়োজন। শাকিব বুবলিকে ফোন দিতে বললে, বুবলি বলেন, ফোন নিয়ে গেছে ভিক্টর (মিশা সওদাগর)। কিন্তু পরের সিনেই বুবলিকে ফোন করতে দেখা যায়। কিভাবে হাতে এলো ফোন তা স্পষ্ট করা হয়নি।
অন্যদিকে ‘নোলক’মূলত কমিটি নির্ভর ছবি। এই ছবিতে দুই জমিদার ভাই বিনা পরিশ্রমে অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়ায় কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। প্রতিবছর তাদের অর্থ সম্পদ বাড়ে কিন্তু তাদের কোন কাজ নেই। কিভাবে অর্থ খরচ করবে তার জন্য দুজন উপদেষ্টা আছে। তাদের পরামর্শে দুই জমিদার ভাই যায় মামলায়, শুধুমাত্র ব্যস্ত থাকার জন্য এই মামলা হলেও এতে সুযোগ পেয়ে যায় দুই উপদেষ্টা। যারা পুরো সম্পত্তি নিজেদের করে নেয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। এই স্বপ্নই শাকিব ও বুবলীর মৃত্যুর কারণ হয়। ছবির ক্যামেরার কাজ ছিলো চমৎকার। এডিটিং ভালো হলে অনেক প্রশংসা পাওয়ার মতো ছবি ছিলো নোলক।
তবে নোলক আর পাসওয়ার্ড ছবির মধ্যে চমৎকার একটি মিল রয়েছে। তাহলো, নোলক ছবির যে গল্প, অর্থাৎ টাকা পয়সা খরচের সুযোগ পাননা জমিদার ভাইরা। বাস্তবে শাকিব খানের পাসওয়ার্ড দেখে মনে হয়েছে, ছবিতে গল্পের প্রয়োজনে টাকা খরচের জায়গা না পেয়ে অযথা অর্থ লগ্নি করা হয়েছে। তা না হলে ছবি শেষ দৃশ্যে মৃত ইমনকে নিয়ে ‘ঈদ মোবারক’গানটি যোগ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। নোলক ছবির গল্পের বাস্তবতা লুকিয়ে ছিলো পাসওয়ার্ড ছবির নেপথ্যে